স্যাটেলাইট সমাচার – দ্বিতীয় পর্ব

স্যাটেলাইট সমাচার – দ্বিতীয় পর্ব

ঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১ বাংলাদেশের প্রথম ভূ-স্থির যোগাযোগ উপগ্রহ। ১১ মে দিবাগত রাত ২:১৪ মিনিটে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উপগ্রহটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের ৫৭ তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় যুক্ত হয় বাংলাদেশ।

durbin-academy-blog
২০০৮ সালে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে কৃত্রিম উপগ্রহটির নকশা তৈরির জন্য ২০১২ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’ প্রকল্পের মূল পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায়। ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে বিটিআরসি স্যাটেলাইট সিস্টেম ক্রয় বাবদ এক হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকার চুক্তি করে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে বিটিআরসি রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় কক্ষপথ(অরবিটাল স্লট) কেনার আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পন্ন করে।

বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ এর নিমিত্তে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় এক হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশ। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি এর সাথে বাংলাদেশ সরকারের প্রায় একহাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান ১১৯.১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমার কক্ষপথে। এর ফুটপ্রিন্ট বা কভারেজ হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে তাজিকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত।

শক্তিশালী কেইউ ও সি ব্যান্ডের মাধ্যমে এটি সবচেয়ে ভালো কাভার করবে পুরো বাংলাদেশ, সার্কভুক্ত দেশসমূহ, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া। এটি প্রায় ৩.৭ টন ওজন বিশিষ্ট এবং প্রায় ১৬০০ মেগাহার্টজ ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ৪০টি কে-ইউ এবং সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার বহন করবে। এটির আয়ু ১৫ বছর হওয়ার কথা ধরা হলেও এর স্থায়িত্ব ১৮ বছর পর্যন্ত-ও দীর্ঘ হতে পারে।

গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় বঙ্গবন্ধু ১ এর গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। আর্থ স্টেশন থেকে ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্যাটেলাইটটির কক্ষপথে যেতে সময় লাগবে ৮-১১ দিন। আর পুরোপুরি কাজের জন্য প্রস্তুত হবে ৩ মাসের মধ্যে। এরপর প্রথম ৩ বছর থ্যালাস অ্যালেনিয়ার সহায়তায় এটির দেখভাল করবে বাংলাদেশ। পরে পুরোপুরি বাংলাদেশী প্রকৌশলীদের হাতেই গাজীপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়া আর্থ স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে এটি। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনেও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ চালু রাখার নিমিত্তে দুটি ভূ-উপগ্রহ উপকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এর মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী নানাবিধ সুফল পাওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশে এখন প্রায় ৩০টি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে আছে। এসব চ্যানেল সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্যাটেলাইট ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, এসব চ্যানেলের জন্য বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সুফল পাওয়া গেলে এই বিপুল পরিমাণ এই অর্থ সাশ্রয় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ট্রানসপন্ডার বা সক্ষমতা অন্য দেশের কাছে ভাড়া দিয়েও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সুযোগ থাকবে। এই স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রানসপন্ডারের মধ্যে ২০টি ভাড়া দেওয়ার জন্য রাখা হবে। পার্বত্য ও হাওর অঞ্চলের মত ইন্টারনেটের সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত এলাকাগুলোয় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। এছাড়া ঝড়, টর্নেডো, সাইক্লোনের মত বড় ধরনের দুর্যোগে যোগাযোগব্যবস্থা সচল রাখতেও এ স্যাটেলাইট কার্যকর হতে পারে। এ ধরনের বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক অনেক সময় অচল হয়ে পড়ে। তখন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হবে। সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলের মানুষের ইন্টারনেট ও ব্যাংকিং সেবা, টেলিমেডিসিন ও দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারেও ব্যবহার করা যাবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট।

durbin-academy-blog
তবে, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে স্যাটেলাইটের এসব সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা। আর এ ক্ষেত্রে প্রথম উদ্যোগটি সরকারকেই নিতে হবে। যাবতীয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো যেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না পড়ে, সেটি নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবেই বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সার্বিক সুফল ভোগ করা সম্ভবপর হবে।

 

– রাফীদ সোবহান আকীব

durbin-academy-blog- mostishker dokkhota baranor upay
durbin-aca