উল্কা ও উল্কা বৃষ্টি

উল্কা ও উল্কা বৃষ্টি

রাতের মেঘমুক্ত আকাশে অনেক সময় নক্ষত্রের মতো ছোট উজ্জল বস্তু পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে দেখা যায় আর এই নক্ষত্রগুলকে বলা হয় উল্কা। অনেকের ধারনা ধূমকেতুর বিচ্ছিন্ন অংশ উল্কা সৃষ্টির কারন। কিন্তু আসলে তা নয়। মহাকাশে অসংখ্য জড়পিন্ড ভেসে বেড়ায় ।এই জড়পিন্ডগুলো মাধ্যাকর্যণ ও অভিকর্ষ বলের আকর্ষনে প্রচন্ড গতিতে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে।পৃথিবীর বায়ূমন্ডলে প্রবেশ করার পর বায়ুর সংস্পর্শে এসে বায়ুর সাথে ঘর্ষনের ফলে এরা জ্বলে উঠে।বেশীরভাগ উল্কাই মহাশূন্যে কিংবা বায়ুর সাথে ঘর্ষনের ফলে জ্বলে ছাই হয়ে যায়।এদের মধ্যে যেগুলো পৃথিবীতে আসে সেগুলোকে উল্কাপিন্ড বলে।প্রত্যেক বছর ই পৃথিবীপৃষ্ঠে উল্কাপাত হয়ে থাকে।প্রায় ১৫০০ মেট্রিক টন উল্কাপিন্ড প্রতিবছর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে ।উল্কাপিন্ড কোণাবিহীন এবং নানা আকারের হয়ে থাকে।বেশীরভাগের রং সাধারনত কালো।উল্কা যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ তখন ই একে দেখা যায়।বায়ুমণ্ডলে মেসোস্ফিয়ার স্তরে এদেরকে দেখা যায়।উল্কাপিন্ড দৃষ্টিগোচর হয় ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫ কিমি.-১১৫ কিমি. এর মধ্যে।উল্কাপাতের ফলে আকাশে বর্নীল আলোকচ্ছটার দেখা মেলে।

উল্কাপিন্ডঃ ভূপৃষ্ঠে পতিত হবার পর উল্কাকে উল্কাপিন্ড বলে।৩ ধরনের উল্কাপিন্ড দেখা যায়-

১|পাথর সমৃদ্ধ উল্কাপিন্ড যা খনিজ সিলিকেট দ্বারা গঠিত।

২|লোহা সমৃদ্ধ উল্কাপিন্ড যা লোহা-নিকেল দ্বারা গঠিত।

৩|পাথর-লোহা সমৃদ্ধ উল্কাপিন্ড যা বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থ ও পাথর দ্বারা গঠিত।

বেশীরভাগ উল্কাপিন্ড ই পাথর এর যেগুলোকে কন্ড্রাইট এবং একন্ড্রাইট শ্রেনীতে ভাগ করা হয়েছে।মাত্র ৬% উল্কাপিন্ড হচ্ছে লোহা এবং পাথর-লোহা দ্বারা তৈ্রী।

পৃথিবীতে পতিত হওয়া প্রায় ৮৬% উল্কাপিন্ড হল কনড্রাইট।এদেরকে কন্ড্রাইট বলা হয় কারন এগুলো ক্ষুদ্র ও গোলাকার পদার্থে তৈ্রী।এগুলো খনিজ সিলিকেট,আ্যমিনো এসিড দ্বারা গঠিত যা আকশে ভাসমান অবস্থায় গলিত রূপে থাকে।প্রায় ৮% উল্কাপিন্ড হল একন্ড্রাইট। কনড্রাইট অলিভাইন,পাইরোক্সিন,চুম্বক দিয়ে গঠিত।বেশীরভাগ এর বয়স ৪.৬ বিলিয়ন বছর। একন্ড্রাইট এক ই ধরনের পদার্থে তৈরী তবে পার্থক্য হল এতে গোলাকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনা দেখা যায়না যা উত্তপ্ত উল্কাপিন্ডের গলিত পদার্থ ঠান্ডা হয়ে তৈরী হয়।

উল্কাবৃষ্টি

রাতের মেঘমুক্ত আকাশে অনেক সময় নক্ষত্ত্রের মত ছোট উজ্জল বস্তু পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে দেখা যায় আর তাই হলো উল্কা বৃষ্টি ।রাতের আকাশে তারা গুনতে যেমন মজার তেমনি মজার উল্কা বৃষ্টি দেখা। মেঘহীন রাতের আকাশে আমরা হঠাৎ উল্কাপাত দেখি।ঝাঁকে ঝাঁকে, দলে দলে উল্কা যখন পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে তখন তাকে উল্কাবৃষ্টি বা উল্কাঝড় বলে।দেখে মনে হয় যেন প্রকৃতি উৎসবে মেতেছে।উল্কাপাতের ঘটনাকে বলা হয় “ইটা আ্যকুয়ারাইডস”। প্রতি বছর সাধারনত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পযন্ত এই উল্কাঝড়ের দেখা পাওয়া যায়।পৃথিবীর সব জায়গায় সমানভাবে এটি দেখা যায়না।উত্তর গোলার্ধের লোকজন প্রতি ঘন্টায় ১০ টি উল্কাপাত আর দক্ষিন গোলার্ধের লোকজন প্রতি ঘন্টায় ৩০ টি উল্কাপাত দেখতে পারে।বিষুবরেখার নিকট এলাকার লোকজন গোধুলীর সময় দেখতে পারে ।বিষুবরেখার নিকটবর্তী এলাকার লোকজন সূর্যদয়ের ৩ ঘন্টা আগেই উল্কাবৃষ্টি দেখতে পারে।উল্কাবৃষ্টি দেখার সবচেয়ে ভাল সময় হলো সন্ধ্যা ও ভোররাত।
কেউ কেউ উল্কাবৃষ্টি দেখার সময় দোয়া প্রার্থনা করে এই মনে করে যে তা পূর্ণ হবে।