রুটিন!
খুবই অদ্ভুত একটা জিনিস হচ্ছে এই “রুটিন”। ছোট্ট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত বারবার একটা কথা সবাই বলে-“রুটিন করে পড়ো, রুটিন করে পড়ো!” আমরাও খুব আজব কাজ করি এটা নিয়ে। অনেক সুন্দর করে অনেক সময় নষ্ট করে সপ্তাহের সাত দিনের ছক কেটে ফেলি। তারপর একটা একটা সাব্জেক্ট আর সময় ধরে ধরে এনে বসিয়ে দেই। ব্যস! হয়ে গেলো চমৎকার একটা রুটিন!
কিন্তু…এহেম এহেম! এই রুটিনটা দেয়ালে টানাবার পর, দ্বিতীয় আরেকবার চোখ ওখানটায় পড়ে না আমাদের। কীসের কী! এত সুন্দর একটা জিনিস, যেটার পেছনে আমাদের সাকসেস জড়িত, সেটাকে আমরা নষ্ট করে ফেলি ধুলো জমিয়ে।
রুটিন করে পড়াশুনা করাটা একটা শিক্ষার্থীকে কতটা সাহায্য করতে পারে সেটা হয়তো আমরা বুঝতে পারি না। কেউ যদি ধৈর্য ধরে ১০ দিন তার রুটিন মোতাবেক পড়াশুনা আর অন্যান্য কাজ করে একটা অভ্যাস বানিয়ে ফেলে, এর চেয়ে সহজ-সুন্দর জীবন আর হতে পারে না।
কথা হচ্ছে, রুটিন মানেই দিন ঘন্টার কাটা কেটে দেয়ালে টানানো। কারো রুটিন এভাবে লিখে লিখেও হতে পারে, আবার কারো না লিখেই। “বাই ডিফল্ট রুটিন” যেটাকে বোঝায়।
আমি এই লেখাটাতে এই বাই ডিফল্ট রুটিনের জন্যেই সবাইকে ফোকাস করতে বলবো। একজন শিক্ষার্থীর নিজের মাথায় একটা হিসেব থাকবে, আমি ঘুম থেকে এতটা বাজে উঠবো, এরপর স্কুল/কলেজ এরপর রেস্ট বা রিফ্রেশনেসের জন্য যা যা লাগে। এরপর সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা-পড়ার সময়, এটা নিজের মাথায় বরাদ্ধ করে ফেলা। এমন নয় যে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সাব্জেক্ট পড়া লাগবে। কিন্তু এটা মাথায় থাকা লাগবে যে প্রতিদিন আমি এত ঘন্টা পড়বো। আরেকটা জিনিস, একটা সাব্জেক্ট একদিন পড়ার পর নেক্সট আবার ওই সাব্জেক্টটা পড়ার দিন এর মাঝে যেন বেশি ব্যাবধান না থাকে। একদিন বা দুইদিন। এভাবে মাথায় যদি আমরা একটা রুটিন সেট করে ফেলি, নিজ থেকেই এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়।
টিভিতে কিছু অনুষ্ঠান হয়ে থাকে, স্কুল নিয়ে। ওখানে উপস্থাপক স্কুলে গিয়ে স্কুলের মেধাবী শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন করেন-“ভালো রেজাল্টের জন্যে কতক্ষণ পড়াশুনা করা লাগে?” উত্তরে প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীই বলেন ৭-৮ ঘন্টা। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে, ৭-৮ ঘন্টা পড়াশুনার প্রয়োজন নেই। যদি তুমি যতটুকু সময় পড়ো মন দিয়ে পড়ো এবং সেই সময়টা সর্বোচ্চ ৪ ঘন্টা। সময় ধরে প্রতিদিন ৪ ঘন্টা করে পড়তে থাকলে খুব দ্রুতই সিলেবাস শেষ হয়ে যায়। ৭-৮ ঘন্টা বসে বসে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে পড়ার দরকার হয় না।
একটা বার চেষ্টা করেই দেখো না, বাই ডিফল্ট একটা রুটিন মাথায় ঢুকিয়ে সেটার মত কাজ করতে। নিজেই অবাক হয়ে যাবে, কতটা গুছিয়ে ফেলেছো নিজেকে!
-মো: রাকিবুল হাসান তুষার,
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস